ভারতে এক নারীর গর্ভে থাকা শিশুর গর্ভে আরও একটি ভ্রূণ

ভারতের মহারাষ্ট্রে একটি বিরল ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ওই রাজ্যে ৩২ বছর বয়সী এক নারীর গর্ভে থাকা শিশুর শরীরে আরও একটি ভ্রূণের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার। সেখানকার একটি সরকারি হাসপাতালে ওই গর্ভবতী নারী সোনোগ্রাফি করানোর জন্য আসেন। তখনই এই ঘটনা লক্ষ্য করেন চিকিৎসকেরা।
বুলধানা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ বিবিসি মারাঠিকে জানিয়েছে, ওই নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
প্রসঙ্গত, ‘ভ্রূণের মধ্যে ভ্রূণ’-এর উপস্থিতি অত্যন্ত বিরল ঘটনা। গবেষণা অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে এমন ঘটনা পাঁচ লাখে একটি।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এই ঘটনা অত্যন্ত বিরল
ঘটনাটি ঠিক কী?
বুলধানা জেলায় ৩২ বছরের ওই নারী তার গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে সোনোগ্রাফি করাতে সরকারি হাসপাতালে এসেছিলেন।
সেই সময় পরীক্ষা করে জানা যায়, ওই নারীর গর্ভে যেমন একটি শিশু রয়েছে, তেমনই ওই শিশুর গর্ভেও একটি ভ্রূণ রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের একটি টিম আরও একবার সোনোগ্রাফি করেন।
তখনও গর্ভে থাকা শিশুটির গর্ভে একটি ভ্রূণ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল।
বুলধানা জেলা সরকারি হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক (সিভিল সার্জন) ডা. ভাগবত ভুসারি বিবিসি মারাঠিকে এই ঘটনার কথা জানিয়েছেন।
ডা. ভুসারি বলেছেন, “সোনোগ্রাফি পরীক্ষার পর দেখা যায়, ওই নারীর গর্ভে একটি শিশু রয়েছে এবং শিশুটির গর্ভে আরও এক শিশু রয়েছে। তবে একে ঠিক শিশু বলা যাবে না, কারণ এটি ফিটাল মাস। এক অর্থে বলতে গেলে, এটি একটি মাংসের পিণ্ড।”
“এটি জীবিত শিশু নয়, কারণ তার হৃদস্পন্দন নেই। দেখতে শিশুর মতো মনে হয় বলেই একে বেবি বলা হয়।”
বিষয়টিকে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ডা. ভুসারির কথায়, “ওই মাংসপিণ্ড আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ সেখানে রক্ত সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। ডাক্তারি ভাষায় একে ফিটাস ইন ফেটু (ভ্রূণের অভ্যন্তরে ভ্রূণ) বলা হয়।”
ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, বুলধানা জেলায় এটাই প্রথম ঘটনা যেখানে ‘ফিটাস ইন ফেটু’র সন্ধান মিলেছে। এটি অত্যন্ত বিরল হলেও এর আগে ভারতে এই জাতীয় ঘটনা আগেও প্রকাশ্যে এসেছে।
এদিকে, এখনও পর্যন্ত যে অবস্থা রয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে বুলধানা জেলা সরকারি হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক ডা. ভাগবত ভুসারি মনে করছেন সন্তানসম্ভবা ওই নারীর ‘নর্মাল ডেলিভারি’ হবে। অর্থাৎ, সন্তান প্রসবের সময় ওই নারীর ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন পড়বে না বলেই মনে করছেন তিনি।
শিশুর জন্মের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে তার গর্ভ থেকে ওই মাংসপিণ্ড কীভাবে অপসারণ করা যায়।
বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।
ফিটাস ইন ফেটু কী?
‘ফিটাস ইন ফেটু’ এমন একটি বিরল বিকাশজনিত অস্বাভাবিকতা যেখানে গর্ভজাত ভ্রূণের গর্ভে আরও একটি ভ্রূণ তৈরি হয়।
‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা বলছে ‘ফিটাস ইন ফেটু’ একটি বিরল এবং ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই সমস্ত ক্ষেত্রে নারীর গর্ভে থাকা শিশুর গর্ভে আরও একটি ভ্রূণ তৈরি হয়, যা অনুন্নত।
সাধারণত, ওই ভ্রূণ গর্ভে থাকা শিশুর গর্ভে একটি পিণ্ডের আকারে দেখা যায়। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই শিশুর পেটে থাকা পিণ্ডও আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তবে গর্ভে থাকা শিশু যেভাবে বেড়ে ওঠে আর যেভাবে এই মাংসপিণ্ডের বিকাশ পায়, সেই দু’টি পদ্ধতি ভিন্ন।
এই বিরল বিষয়টিকে বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নন্দিতা পালশেটকর।
ডা. পালশেটকর বলেছেন, “ফিটাস ইন ফেটু অবস্থায় থাকা শিশুরা যমজ। কিন্তু তাদের মধ্যে একজনের সমস্যা থাকায় তার বৃদ্ধি হয় না। ক্রমে অন্য শিশুর গর্ভে ওই অন্য ভ্রূণটি চলে যায়।”
“কিন্তু এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। শিশুর জন্মের পর শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে ওই পিণ্ডকে তার পেট থেকে বের করে আনা যায়।”
মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি শম্ভাজিনগর (আগে যা ঔরঙ্গাবাদ নামে পরিচিত ছিল) জেলার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মঞ্জু জিল্লাও এই বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন।
তার কথায়, “এই মেডিক্যাল কন্ডিশনে একটি ভ্রূণের গর্ভে একটি পিণ্ড দেখা যায়। কিন্তু সেটি শিশুর আকারের মতো বাড়ে না।”
“ওই মাংসপিণ্ডে শিশুর মতোই টিস্যু—চুল, দাঁত, চোখ দেখতে পাওয়া যায়। সার্জারি বা ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে ওই পিণ্ড অপসারণ করা যেতে পারে। এতে শিশুর কোনোরকম বিপদ হওয়ার আশঙ্কা নেই। শুধু তার পেট থেকে ওই পিণ্ড বের করে আনা হয়।”
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘ফিটাস ইন ফেটু’ বা ভ্রূণের অভ্যন্তরে ভ্রূণের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। পাঁচ লাখ শিশুর জন্মে মাত্র একটি এমন ঘটনা দেখা যায়।
‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে ২০০টিরও কম এমন ঘটনা নিবন্ধিত করা হয়েছে।
ফিটাস ইন ফেটু কী?
‘ফিটাস ইন ফেটু’ এমন একটি বিরল বিকাশজনিত অস্বাভাবিকতা যেখানে গর্ভজাত ভ্রূণের গর্ভে আরও একটি ভ্রূণ তৈরি হয়।
‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা বলছে ‘ফিটাস ইন ফেটু’ একটি বিরল এবং ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই সমস্ত ক্ষেত্রে নারীর গর্ভে থাকা শিশুর গর্ভে আরও একটি ভ্রূণ তৈরি হয়, যা অনুন্নত।
সাধারণত, ওই ভ্রূণ গর্ভে থাকা শিশুর গর্ভে একটি পিণ্ডের আকারে দেখা যায়। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই শিশুর পেটে থাকা পিণ্ডও আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তবে গর্ভে থাকা শিশু যেভাবে বেড়ে ওঠে আর যেভাবে এই মাংসপিণ্ডের বিকাশ পায়, সেই দু’টি পদ্ধতি ভিন্ন।
এই বিরল বিষয়টিকে বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নন্দিতা পালশেটকর।
ডা. পালশেটকর বলেছেন, “ফিটাস ইন ফেটু অবস্থায় থাকা শিশুরা যমজ। কিন্তু তাদের মধ্যে একজনের সমস্যা থাকায় তার বৃদ্ধি হয় না। ক্রমে অন্য শিশুর গর্ভে ওই অন্য ভ্রূণটি চলে যায়।”
“কিন্তু এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। শিশুর জন্মের পর শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে ওই পিণ্ডকে তার পেট থেকে বের করে আনা যায়।”
মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি শম্ভাজিনগর (আগে যা ঔরঙ্গাবাদ নামে পরিচিত ছিল) জেলার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মঞ্জু জিল্লাও এই বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন।
তার কথায়, “এই মেডিক্যাল কন্ডিশনে একটি ভ্রূণের গর্ভে একটি পিণ্ড দেখা যায়। কিন্তু সেটি শিশুর আকারের মতো বাড়ে না।”
“ওই মাংসপিণ্ডে শিশুর মতোই টিস্যু—চুল, দাঁত, চোখ দেখতে পাওয়া যায়। সার্জারি বা ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে ওই পিণ্ড অপসারণ করা যেতে পারে। এতে শিশুর কোনোরকম বিপদ হওয়ার আশঙ্কা নেই। শুধু তার পেট থেকে ওই পিণ্ড বের করে আনা হয়।”
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘ফিটাস ইন ফেটু’ বা ভ্রূণের অভ্যন্তরে ভ্রূণের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। পাঁচ লাখ শিশুর জন্মে মাত্র একটি এমন ঘটনা দেখা যায়।
‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে ২০০টিরও কম এমন ঘটনা নিবন্ধিত করা হয়েছে।

সাধারণত অস্ত্রোপচার করে শিশুর গর্ভে থাকা ভ্রূণ অপসারণ করা হয়, প্রতীকী ছবি
এর চিকিৎসা কী?
‘ফিটাস ইন ফেটু’-র ক্ষেত্রে যে শিশুর গর্ভে অন্য ভ্রূণ বা সঠিকভাবে বলতে গেলে মাংসপিণ্ড রয়েছে, তার সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। ভ্রূণ অপসারণ করার পর সাধারণত শিশু সুস্থ হয়ে ওঠে।
কখন এই পরিস্থিতির কথা জানা যেতে পারে, তার উত্তরে ডা. নন্দিতা পালসেখর বলেছেন, “গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে সাধারণত ১৪ সপ্তাহ পর সোনোগ্রাফিতে এটা ধরা পড়ে।”
সাধারণত, গর্ভাবস্থা চলাকালীন বিভিন্ন সময় গর্ভবতী নারীর সোনোগ্রাফি করা হয়ে থাকে। সেই পরীক্ষার সময় শিশুর গর্ভে অন্য একটি ভ্রূণের উপস্থিতির কথা জানা যেতে পারে।
ডা. নন্দিতা পালশেটকরের কথায়, “শিশুর জন্মের পর যদি তার পেট ব্যাথা করে, বমি বমি ভাব থাকে বা বমি হয়, তাহলে তা সমস্যার বিষয়। এই অবস্থায় শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে রোগ ধরা পড়বে।”
যদি গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা ধরা না পড়ে তাহলে শিশুর জন্মের পরেও এটা লক্ষ্য করা যেতে পারে। যদি লক্ষ্য করা যায় যে জন্মের পর সদ্যজাত শিশুর পেট ফুলে রয়েছে, তাহলে সোনোগ্রাফির মাধ্যমে ‘ফেটাস ইন ফেটু’ ধরা পড়তে পারে।

বারাণসীর স্যার সুন্দরলাল হাসপাতালে নবজাত শিশুর অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা