অপরাধ

আয়নাঘরের ভেতরে খুবই বীভৎস দৃশ্য: ড. ইউনূস

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ রয়েছে৷ সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয়েছে ‘আয়নাঘর’৷

ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমাকে নতুন করে বলতে হবে না৷ বর্ণনা দিতে গেলে বলতে হয়—আয়নাঘরের ভেতরে খুবই বীভৎস দৃশ্য৷ এখানে মনুষ্যত্ববোধের কিছু নেই৷ যা হয়েছে তা নৃশংস৷”

আয়নাঘরে যে পরিবেশে মানুষকে আটকে রাখা হয়েছিল তা দেখে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘এটা কি আমাদেরই সমাজ? এটার কোনো ব্যাখ্যা নাই৷ যতটাই শুনি, অবিশ্বাস্য মনে হয়৷ যারা নিগৃহীত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে তারাও আমাদের সঙ্গে এসেছে, তাদের মুখেই শুনলাম৷ বিনা দোষে কতগুলো সাক্ষী নিয়ে, হাতে এক্সপ্লোসিভ ধরিয়ে দিয়ে কাউকে সন্ত্রাসী-জঙ্গি বলে রাখা হয়েছে৷”

তিনি বলেন, ‘‘এই রকম টর্চার সেল সারা বাংলাদেশ জুড়ে আছে সেটাও শুনলাম আজকে৷ কতগুলো আছে সেই সংখ্যা কিছু জানা আছে আর বাকিটা অজানা৷ গত সরকার আইয়ামে জাহিলিয়াত যুগের একটা নমুনা প্রতিষ্ঠা করে গেছে৷ গুম কমিশন এসে এসব উদঘাটন করেছে৷ দেশের যে চূড়ান্ত অবনতি দেখলাম এইটা তার একটা প্রতিচ্ছবি৷ মানুষকে সামান্যতম মানবিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল৷”

ড. ইউনূস ঢাকার কচুখেতে ডিজিএফআই এবং উত্তরা ও আগারগাঁওয়ে র‍্যাবের আয়নাঘর পরিদর্শন করেন৷ এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের দুটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং ভুক্তভোগীদের কয়েকজন যোগ দিয়েছিলেন৷ তবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং বেঁচে যাওয়াদের বৃহত্তর একটি অংশকে সঙ্গে নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে ডিডাব্লিউর কন্টেন্ট পার্টনার ডেইলি স্টার৷

‘ভুক্তভোগীরা এখনো ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন’ জানিয়ে গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’ তাদের শাহীনবাগ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে৷

তুলে নেওয়া মানুষদের কেউ কেউ বহু দিন পর পরিবারের কাছে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের বিবরণ দিলেও অনেকের খোঁজ এখনো মেলেনি৷ বিভিন্ন বাহিনীর আওতাধীন এমন আয়নাঘরের সন্ধান পাওয়ার কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ‘গুম তদন্ত কমিশন’৷

আয়নাঘরেই আটকে রাখা হয়েছিল, চিনতে পারলেন নাহিদ ও আসিফ।

জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে তুলে নেয়ার পর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) টর্চারসেলে (আয়নাঘর) আটকে রাখা হয়েছিল৷

আজ বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে ডিজিএফআইয়ের সেই দুই টর্চারসেল চিনতে পারার কথা জানিয়েছেন নাহিদ ও আসিফ৷ জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নাহিদ ও আসিফকে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হয়৷

আয়নাঘর পরিদর্শনের পর নাহিদ জানান, তাকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কক্ষের একপাশে টয়লেট হিসেবে একটি বেসিনের মতো ছিল৷ ৫ আগস্টের পর এই সেলগুলোর মাঝের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়, দেয়াল রং করা হয়৷

আয়নাঘর পরিদর্শনের পর আসিফ জানান, তাকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কক্ষের দেয়ালের উপরের অংশের খোপগুলোতে এক্সস্ট ফ্যান ছিল, এখন নেই৷

আসিফ আরও জানান, তিনি দেয়াল দেখে কক্ষটিকে চিনতে পেরেছেন৷ কক্ষটি আগে অনেক ছোট ছিল, এখন মাঝের দেয়াল ভেঙে বড় করা হয়েছে৷ ওই কক্ষে তাকে চারদিন আটকে রাখা হয়েছিল৷ এসময় বাইরের কারও সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি৷ টয়লেট ছিল কক্ষের বাইরে এবং তাকে চোখ বেঁধে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া হতো৷

আয়নাঘর

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button